দুদকের মামলার পরেও রেলের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩ আগস্ট, ২০২৫, 1:41 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩ আগস্ট, ২০২৫, 1:41 PM
দুদকের মামলার পরেও রেলের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েও পদোন্নতি ও পছন্দমতো পদ পেয়েছেন রেলের দুই কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত হয়েও তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো গত ১৯ জুন তাদের উভয়কেই উচ্চ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
দুদকের দায়ের করা পৃথক দুটি মামলার এজাহারে নাম থাকা সত্ত্বেও ফরিদ আহমেদকে রেল পরিদর্শক থেকে পদোন্নতি দিয়ে মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) এবং আনোয়ারুল ইসলামকে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) থেকে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পশ্চিম) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা ছিল তাদের দুই জনেই পছন্দের পদ ।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন আমি পদোন্নতি পাইনি । আমি সমগ্রেডের আরেকটা শাখার দায়িত্বে ছিলাম সেখান থেকে মহাব্যবস্থাপক হয়েছি। এই দুই পোস্ট একই পদমর্যাদার। দুদকের মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি রূপান্তরকে বলেন এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য বা বক্তব্য দিতে চাই না। আরো এক অভিযুক্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আহসানুল কবির পলাশের দায়ের করা এসব মামলায় অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের সরঞ্জাম ক্রয় প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারকে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে।
একটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অযোগ্য প্রতিষ্ঠান এস এম ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজিকে বেআইনিভাবে কাজ দিয়ে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করা হয়। অন্য মামলায় অভিযোগ, রেলওয়ের ক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র ও মালামালের পরিমাণ পরিবর্তন করে ২৪ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, চুক্তিপত্র জালিয়াতি করে একই মাল একাধিক দেখিয়ে মূল্যের গরমিলের মাধ্যমে এ দুর্নীতি সংঘটিত হয়।
তথ্য অনুযায়ী, একটি ক্ষেত্রে ১টি পাম্প কেনা হয় প্রায় ১১ লাখ টাকায়, কিন্তু জাল কাগজে দেখানো হয় ৩টি পাম্প কেনা হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দরে। একইভাবে, ১টি ওয়াটার পাম্প কেনা হয় ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায়, অথচ জাল চুক্তিপত্রে দেখানো হয় ৩টি কেনা হয়েছে প্রতিটি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দরে।
দুদকের অনুসন্ধান ও মামলার পরেও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের একাংশকে লাভজনক পদে বহাল রাখা হয়েছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ অথবা বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়নি—যা জনমনে প্রশ্ন ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের সর্বশেষ অডিট প্রতিবেদনে রেলওয়ের এই অনিয়ম, দুর্নীতির নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। রেলওয়েতে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে বাজারমূল্য থেকে বেশি দরে একের পর এক যন্ত্রপাতি ক্রয়; সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদারের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি মেরামত করে ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা লোপাট করেছেন রেলওয়ের পার্বতীপুর, সৈয়দপুর ও পাহাড়তলী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। রেলওয়ে কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অনেক অডিট আপত্তি এখনো নিষ্পত্তি করেননি বলে জানা গেছে।
দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।