নিত্য নতুন সংকট, দৌলতদিয়ায় যানজট অব্যাহত পণ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘ সারি
২৩ নভেম্বর, ২০২১, 5:36 PM

২৩ নভেম্বর, ২০২১, 5:36 PM

নিত্য নতুন সংকট, দৌলতদিয়ায় যানজট অব্যাহত পণ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘ সারি
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া -পাটুরিয়া নৌরুটে গত কয়েকদিন ধরে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়ে আসছে। দুই দিন আগে আসা গাড়ি দুইদিন পরে পার হচ্ছে। এ কারণে রাস্তাতেই চালক, চালকদের সহযোগীদের রাত কেটে যাচ্ছে। নিত্য নতুন সংকটে পরছে দৌলতদিয়া ঘাট। ঘাট স্বল্পতা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, নদীতে পানি কমতে শুরু করায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে বলছে ঘাট কতৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিআইডব্লিউটিসির ড্রেজার দিয়ে অন্যত্র মাটি সরিয়ে নাব্যতা সংকট দূর করার চেষ্টা চলছে তবে এই সমস্যার সমাধান দ্রুত শেষ হবেনা বলে মনে করছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের নব নির্মিত ওয়াজেদ চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পারের অপেক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন যাত্রীবাহি বাস ও পণ্যবাহি ট্রাক। মাঝেমধ্যে যানবাহনের সারি ৬-৮ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হচ্ছে।তবে এর মধ্যে পণ্যবাহি ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। গণপরিবহন (বাস) গুলোকে ফেরি পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগলেও প্রতিটা পণ্যবাহী ট্রাক গুলোকে ১ থেকে ৩ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পেতে।
এতে করে গাড়িতেই নির্ঘুম রাত কেটে যাচ্ছে চালক, চালকদের সহোযোগি ও গণপরিবহনের যাত্রীদের। দূর্ভোগ জেনো নিত্য দিনের সঙ্গী ঘাট পারি দিতে আসা এসব চালক, যাত্রীদের। এরপরে আবার মহাসড়কের বেহাল দশা হওয়ায় এবং রাস্তাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় বিশেষ করে গভীর রাতে ঘটছে দূর্ঘটনার মতো ঘটনা। থেমে থেমে গাড়ী টানার কারণে গাড়ি ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও যেতেও পারছেন না বলে জানান চালকরা। দীর্ঘ যানজটে বসে থাকায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরার কারণে বিভিন্ন সময় মোবাইলসহ ব্যাগ ছিনতাই হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
বরিশাল থেকে ভূট্টা ভর্তি কাভার্ড ভ্যান (ট্রাক) নিয়ে ঢাকা আমিন বাজার যাচ্ছিলেন চালক মানিক লাল। তিনি রবিবার সন্ধার পর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখান থেকে রবিবার ভোরে ঘাটের দিকে এসে এখনো দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ঘাট থেকে ১ কিলোমিটার দূরে। এখনও ফেরি পেতে কত ঘন্টা লাগবে কে জানে!
বেনাপোল থেকে নারায়ণগঞ্জ গামী ট্রাকের চালক চাঁন মিয়া জানান, রবিবার ভোরে ঘাট এলাকায় আসেন তিনি। প্রায় ১২ ঘণ্টায় তিনি ঘাট এলাকার লঞ্চ ঘাট টার্নিং পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ব্যবস্থা হলো? এখন আর কুলাতে পারছি না। ফেরিতে উঠতে আর কয় ঘণ্টা সময় লাগবে সেটাই ভাবছি। আমার পেছনে আরও শতশত ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সিরিয়ালে আছে।
ফেরিঘাট সড়কের পুলিশ বক্সের সামনে যানজটে আটকা ঈগল পরিবহনের চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা যাত্রী মনির হাসান বলেন, কিছুদিন আগেও ট্রাকের এবং গণপরিবহনের সিরিয়াল আলাদা থাকতো। কিন্তু লক্ষ করছি ট্রাকের সিরিয়াল আলাদা থাকলেও দুইলাইন করে বাসের সাথেও ট্রাকের সিরিয়াল করা হচ্ছে। এতে করে যাত্রীরা সময় মতো অফিসে পৌছাতে পারেনা। তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আগের ব্যাবস্থার দাবি জানান।
বরিশাল থেকে সাকুরা পরিবহনে আসা জাহিদ নামের নামের এক যাত্রী বলেন, মাঝে মধ্যেই ঢাকা যেতে এই রূট ব্যাবহার করি। আগে বাসের লাইনে কোন ট্রাক দেখতাম না। কিন্তু আজ বাসের লাইনে ট্রাক দেখে অবাক হচ্ছি। সময়মত ঢাকা পৌঁছানো হবে না বলে জানান তিনি। দেরিতে পৌঁছানোর ফলে তাকে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে তিনি জানান।
দৌলতদিয়া ঘাট তত্তাবধায়কের দায়িত্বে থাকা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক কর্মী জানান, আগে বাস এবং ট্রাকের আলাদা সিরিয়াল থাকতো কিন্তু এখন তা আর থাকেনা। এতে করে যাত্রীদের আলাদা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে চালু রয়েছে পাঁচটি। বাকি ১ ও ২ নম্বর ঘাট দুই বছর আগে নদীভাঙনের কবলে পড়ায় এখনো চালু হয়নি। বাকি পাঁচটি ঘাটের মধ্যে ৩ নম্বর ছোট ফেরির পন্টুন সরিয়ে সেখানে রো রো ফেরির পন্টুন বসানো হয়। এছাড়া আরো একটি ঘাট রো রো ফেরির জন্য প্রস্তুত করা হবে। সেই সঙ্গে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি বন্ধ। এ কারণে ঐ নৌপথের গাড়ি এই নৌপথ দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এসব কারণে বাড়তি চাপ থাকছে। আরও একটি বড় পন্টুন বসলে সমস্যা কিছুটা কমবে। তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট বড় মোট ১৬ টি ফেরি চলাচল করছে তবে এতদিন পানি বেশি ও নদীতে স্রোত থাকায় যানজটের সৃষ্টি হতো আর এখন পানি কমতে শুরু করায় ও শীত শুরু হওয়াতে কুয়াশা এবং পানি কমতে থাকায় নাব্যতা সংকট নতুন সমস্যা রূপে দেখা দিয়েছে। নাব্যতা সংকটের জন্য ড্রেজার বসিয়ে মাটি কাটা শুরু হয়েছে। আশা করছি অচিরেই এ সংকট কিছুটা হলেও কমবে।